বিশ্বব্যাপী পরিযায়ী মানুষের মধ্যে ভারতীয়রাই শীর্ষে
মানুষের
চলার কোনও শেষ নেই। কেউ কাছেপিঠে যাওয়া-আসা করেন, আবার কেউ যান অনেক দূরে। এক ঘন্টা, দু ঘন্টা ট্রেনে বা বাসে করে রোজ কাজের
জায়গায় যান অনেকে। ফিরেও আসেন একই দিনে। আবার
অনেকে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে কাজের সন্ধানে এতই দূরে চলে যান যে, সেখান থেকে চাইলেও আর
সহজে ফেরা যায় না। থেকে যেতে হয় সেখানে। সময়
সুযোগ পেলে বা খুব প্রয়োজন হলে, তবেই বাড়ি ফেরা হয়। এঁরাই হলেন অভিবাসী বা পরিযায়ী
মানুষ, যাঁরা কাজ করতে যান ভিন দেশে। নভেল করোনাভাইরাসের তাড়নায় লকডাউনের জেরে এমনই
বহু পরিযায়ী শ্রমিক কাজ হারিয়ে বাড়ি ফেরেন।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেই ফেরার চেষ্টার পরিণতি হয় মর্মান্তিক। তবুও ভারতের নানা
প্রান্ত থেকে, দেশের নানা দিকে ফিরে যান প্রায় ৮০ লক্ষ পরিযায়ী কর্মী।
পৃথিবী
জুড়েই পরিযায়ী মানুষের যাওয়া আসা লেগে থাকে। অভিবাসনের ওপর রাষ্ট্রসঙ্ঘের ২০২০ সালেররিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে পরিযায়ী মানুষের সংখ্যা ছিল ২৭২ মিলিয়ন
বা ২৭.২ কোটি। পৃথিবীর জনসংখ্যার এটা ৩.৫ শতাংশ। এর থেকে বোঝা যায় যে, বেশিরভাগ মানুষই
নিজের ঘরবাড়ি, আত্মীয় পরিজন ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে চান না।
আবার
এই পরিযায়ী মানুষের অর্ধেকেরও বেশি হলেন পুরুষ - প্রায় ৫২ শতাংশ। আর মহিলাদের সংখ্যা
একটু কম - ৪৮ শতাংশ।তবে এখন দেখা যাচ্ছে, নিজের জায়গা ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র
যাওয়ার ব্যাপারে মহিলারাও আর পিছিয়ে নেই। এবং নানা কারণে যাঁরা ভিনদেশে পাড়ি দিচ্ছেন,
তাঁদের বয়স কত? ২০ থেকে ৬৪, জানা যাচ্ছে রিপোর্ট থেকে। অর্থাৎ, অল্পবয়সী থেকে প্রৌঢ়,
সকলেই আছেন ওই অভিবাসীদের মধ্যে।
বিশ্বজুড়ে
যে পরিযায়ী মানুষ ছড়িয়ে আছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলেন ভারতীয়। তাঁদের সংখ্যা
১৭.৫ মিলিয়ন বা ১.৭৫ কোটি। তালিকায় ভারতের ঠিক পরেই রয়েছে আয়তন ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে
ভারতের চেয়ে অনেক ছোট দেশ মেক্সিকো। প্রায় ১১.৮ মিলিয়ন/১.১৮ কোটি মানুষ সে দেশ থেকে
চলে গেছেন অন্য দেশে। আর তৃতীয় স্থানে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ চিন। রিপোর্ট
বলছে, ১০.৭ মিলিয়ন/১.০৭ কোটি চিনা নাগরিক নানা কারণে অন্য দেশে বসবাস করছেন।
এই
বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী মানুষ কোথায় যাচ্ছেন? অবশ্যই নানা দেশে। তবে কোনও একটি দেশ
যদি তাঁদের চুম্বকের মত আকর্ষণ করে থাকে, তা হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর ৫০.০৭
মিলিয়ন বা ৫.০৭ কোটি মানুষ সে দেশে যান। কেউ যান জীবিকার সন্ধানে, কেউ পড়তে।
পরিযায়ী
মানুষ যে যেখানে কাজ করেন, সেখান থেকে তাঁরা তাঁদের উপার্জনের একটা অংশ নিজের দেশে
তাঁদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে থাকেন। আর এই পরিযায়ী মানুষের পাঠানো টাকা সবচেয়ে বেশি
আসে ভারতে। তার পরিমাণটা হল ৭৮.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকা,
এখনকার ১ ডলার সম ৭৬ টাকা বিনিময়মূল্য হিসেবে। তার পরেই স্থান চিনের (৬৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন
ডলার/৫.১৫ লক্ষ কোটি টাকা)। এবং তৃতীয় স্থানে আছে মেক্সিকো (৩৫.৭ বিলিয়ন মার্কিন
ডলার/২.৭১ লক্ষ কোটি টাকা)।
আর
পরিযায়ীদের মাধ্যমে যে দেশটি থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ টাকা পৃথিবীর নানা দিকে পৌঁছে
যায়, সে দেশটিও হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখান থেকে ৬৮ বিলিয়ন ডলার (৫.১ লক্ষ কোটি
টাকা) চলে যায় অভিবাসীদের পাঠান অর্থ হিসেবে। তার পরের স্থানে আছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী।
সেখান থেকে যায় ৪৪.৪ বিলিয়ন ডলার বা ৩.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা। আর তৃতীয় স্থানে আছে সৌদি আরব, যেখান থেকে যায়
৩৬.১ বিলিয়ন ডলার বা ২.৭৪ লক্ষ কোটি টাকা।
Comments
Post a Comment